আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতই কুৎসিত যে এখানে নকলের মত অপরাধ করে হলেও ক্লাস নাইনের মেয়ে কে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হয়। আর আমাদের শিক্ষকগণ এতই মহান যে এতে নিজেদের অপরাধ, নিজেদের নৈতিকতা কে একবারের জন্যও প্রশ্ন না করে সেই ছাত্রী কে, তার বাবা মা কে অপদস্থ, অপমান করে। এমন ঘটনা যদি দেশের মফস্বল শহরের অখ্যাত কোন স্কুলে ঘটত তাহলে এটা হয়ত মানুষজনের নজরেও আসত না। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটে বসে আছে দেশের সেরা স্কুলে।সেরা স্কুলের চেহারা যদি এমন হয় আশা করি বাকিদের অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়। তাই বাকিদের নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য আজ পর্যন্ত হয়নি, সম্ভবত আর হবেও না। ... ...
শিলচরে বড় হবার সুবাদে ছেলেবেলা থেকে দেখতাম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর দিন কতক পরেই পাড়ায় পাড়ায় আরেকটি দিন উদযাপনের ধুম পড়ে যেত, সেটি ১৯শে মে। ১১ শহীদের ছবি একটা চেয়ার বা অস্থায়ীভাবে তৈরি বেদীর উপর রেখে ফুলে ধূপে সাজিয়ে রাখা হতো, কেউ কেউ পাশে বাংলা দেশাত্মবোধক গান মাইকে বাজিয়ে দিত, কেউ নয়। এই রীতিতে দিবস উদযাপনের রীতিটি বোধ করি শিলচরীয়, বা কাছাড়ি ব্যাপার। কেননা, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতে ওমন দেখা যায় না। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে বা নেতাজী জয়ন্তীতে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রভাত ফেরি হতো, স্কুল থেকেই যোগ দিতে বলা হতো। কিন্তু ১৯শের কোনো পথ চলাতে গেছি বলে মনে পড়ে না। কলেজে গিয়ে জেনেছি যে ১৯শের দিনে খুব সকালে শিলচর শ্মশানে জড়ো হওয়া আর বিকেলে গান্ধিবাগ শহীদ বেদীতে –একটি নিয়মিত প্রথা। ... ...
পুজোর দিনগুলিতে সন্ধ্যে নামার আগেই শিউলি চলে আসে শিঙ্গিমারি নদীর কাছে। সাবেক বাত্রিগাছ ছিটমহলের কোল ঘেঁসে শিঙ্গিমারি বয়ে চলেছে ভূগোলের মানচিত্র ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া আর এক বঙ্গদেশের হাতছানির অমোঘ ইশারায়। শিঙ্গিমারির কাছে এলেই শিউলি যেন তাঁর মাকে ফিরে পায়। পূজো আসলেই শিউলির গোলাপি মনটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। দুর্গার মুখ দেখলেই কেবলই মায়ের মুখ মনে পড়ে। ফ্যালফ্যাল করে সে মণ্ডপের দুগগা মার মুখপানে চেয়ে থাকে। শিউলির বিলক্ষণ মনে আছে, এমনই এক শারদ সন্ধ্যা ঝুপ করে নেমে আসার সন্ধিক্ষণে শিঙ্গিমারির কূল ধরে মা চলেছিল বিসর্জনের পথে। ... ...
আজ চোদ্দমাস হতে চললো পেপার মিলের কর্মীরা মাইনে পায়না। অন্নচিন্তা চমৎকারা। চোদ্দমাসের কপর্দক শূণ্যতা সহস্রাধিক সংসারকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জনপদ ধ্বস্ত। রাঙা অধর নয়ন কালো, ভরা পেটেই লাগে ভালো। এত দিনের স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরচূর। এক্সোডাস শুরু হয়ে গেছে। এই অশণি সংকেত সূদূর কল্পনাতেও ছিল না কাগজকল ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদের। উজার করে তারা ভোট দিয়েছে, ক্ষমতায় এনেছে বিজেপিকে। তারপরই বন্ধ হয়ে গেল পাঁচগ্রামের মিল কর্মীদের মাসমাইনে। প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি, তারপর আশার ছলনে ভুলি....। শুধু কর্মহীন স্টাফদের হিসেব নিলে চলবে? ক্যাজুয়াল কর্মী রয়েছে আরও সহস্রাধিক। তাদের উপার্জন বন্ধ ষোল মাস। তাদের ঘিরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য দোকানী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এক্সোডাস, এক্সোডাস। রোজ শোনা যাচ্ছে মিল বিক্রী হয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট চত্বরে। তারা যে পুরোনো কর্মীদের বহাল রাখবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর সরকারের হাতে মাসমাইনের টাকাটুকুও নাকি অবশিষ্ট নেই। কিন্তু নমামি বরাক নদী উৎসব? সেটি কীভাবে সম্পন্ন হবে? ... ...
কেউ কেউ প্রায় ভিডিও করে বসে প্রত্যেকটা ফ্রেম। একেক ক্লিকে দশ বারোটা ছবি। অন্তত একটা হলেও শার্প ফোকাস তো পাওয়া যাবে। কেউ সাবজেক্টের ডানে বামে উপরে নিচে নড়েচড়ে ফ্রেম ঠিক করতে না পেরে যেন গাছকেই বলে বসে- বাবা একটু ডান দিকে সরলে আলোটা ভালো করে পাবি। কেউ পাখির ছবি তোলার জন্য পাখির কাছে যেতে যেতে পাখিটাই উড়িয়ে দেয়। কেউ সতর্কভাবে খেয়াল রাখে অন্যদের আবিষ্কার করা পজিশন আর ফ্রেমে; তারপর সেখানে গিয়ে মারে কয়েকটা ক্লিক। কেউ কনফিউজড। কারো দৃষ্টি সুন্দরবনের ক্ষুদ্রপ্রাণ; ক্ষুদ্র কীট- এক আংটাওয়ালা ক্ষুদ্র লাল কাঁকড়া- লাফানো মাছ- শামুক। কেউ বারবার এর তার মনিটরে চোখ দিয়ে মিলিয়ে নেয় অন্যের ছবির সাথে নিজের ছবির ভালোমন্দত্ব। কারো ক্যামেরা বিশাল বনকে ঝাপসা রেখে শুধু তুলে আনে কয়েক ইঞ্চি দৈর্ঘ্য প্রস্থের একেকটা টুকরা... শুধু নয়নের কোনো তাড়াহুড়া নেই। ফ্রেম খোঁজে না। সাবজেক্ট খোঁজে না। ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে সে আশপাশে তাকায়। দেখে। হাঁটে। তার চোখে ধরা পড়ে গাছের পাতার ফাঁকে বসে থাকা ছোট পাখি। তার চোখে ধরা পড়ে দূরে কেওড়া গাছের নিচে হরিণের নড়াচড়া। তার চোখে ধরা পড়ে কাদার মধ্যে মিশে থাকা থাবা খাওয়া হরিণের রক্ত। ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে নয়ন শুধু দেখে আর হাঁটে আর কী যেন খোঁজে... ... ...
আসামের চা বাগানে শতাব্দীকাল আগে কাজ করতে যাওয়া মধ্য ভারতের আদিবাসী মানুষদেরও স্থানীয়রা 'বঙ্গালী'ই বলে! কেননা আসামে বাইরে থেকে আসা সবাইকেই বঙ্গালী বলা হত। সাহেবরা ছিল 'গোরা বঙ্গালী'! অসমীয়া অধ্যুষিত অঞ্চলে বাঙালি মানুষদের আগমনের দীর্ঘ ও নিবিড় ইতিহাস এর থেকে বোঝা যায়। এবং অবশ্যই প্রশাসনিক বা অর্থনৈতিক কাজে বাঙালিদের আধিপত্য স্থানীয় মানুষদের চোখে এক বিদ্বেষের ভাবনা তৈরী করতে করতে গেছে বিগত শতাব্দীগুলোর ইতিহাস জুড়ে। মিলেমিশে থাকার ইতিহাসও ছিল অবশ্যই। বাহ্যিক উস্কানি ছাড়া মানুষ এক জায়গায় থাকলে যেভাবে মিলেমিশে থাকে, সেরকম। সেই থাকার মধ্যে জীবন সংগ্রাম ছিল, জীবনের গানও ছিল। ভুপেন হাজারিকা, জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, বিষ্ণু রাভা, হেমাঙ্গ বিশ্বাসরা যখন একসাথে মিলে মানুষের গান গাইছেন, তখন সেই সমষ্টিযাপন আর সংগ্রামের ইতিহাস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ... ...
অন্তর্জালে ঢুকে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই দেখতে পাব স্বাধীনতার পর ১৯৬১-র মধ্যেই হারিয়ে গেছে ২২০টি। আগের তো কোনো হিসাবই নেই। পরেরও না। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে তো জনগণনা বন্ধ। মানুষের খবরই কেউ রাখছে না, তার আবার ভাষা! ... ...
আশঙ্কা ও বিষাদের হাত ধরে ১৪ ই অগাস্ট '৪৭ এসেছিল- আমরা পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে গেলাম। তবে স্কুলে বা বাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা ওঠে নি। মাঝে, অখণ্ড বাংলা গঠনের কথা নিয়ে শরৎ বসু, কিরণশঙ্কর রায়, সোহরাবর্দি প্রভৃতি নেতারা বহু আলোচনা করলেও, হিন্দু-মুসলমান রাজনৈতিক নেতারা প্রায় সকলেই এ প্রস্তাব অন্তত তৎকালীন পরিবেশে অবাস্তব মনে করলেন। বর্ণহিন্দুরা পাকিস্তানের মুসলমান গরিষ্ঠতার শাসন মেনে নিতে অপ্রস্তুত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য মহাত্মা গান্ধীর আন্তরিক প্রয়াস তাঁদের মনে বিন্দুমাত্র সাহস যোগাতে পারল না। আমাদের বাড়ির আট- নয় গৃহস্থ পরিবারের মধ্যে পড়ে রইলাম আমরা তিন - চার ঘর। মা বাবার ওপর চাপ দিতে লাগলেন কলকাতায় সপরিবার চলে যেতে। বাবা তখনও গররাজি। এভাবে এক বছর কেটে গেল। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে টেনের ক্লাস আরম্ভ হল। ততদিনে স্কুলের মাঠ চোর-কাঁটায় ভরে গেছে, খেলাধুলা হয় না। গ্রামের ক্লাবের অবস্থাও সঙ্গীন। টিমটিমে আলো-ও জ্বলে না সন্ধ্যের পরে। ম্লান সন্ধ্যা। নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব ঘিরে ধরতে লাগল। ঐ বছরই, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দূর্মূল্যতা সম্পর্কে বাবা এক পত্রে লিখছেন , " চালের দাম মণ প্রতি ২১-২২ টাকা; দুধঃ টাকায় তিন - সাড়ে তিন সের; নারকেল ১ জোড়া ৮-১০ আনা। পত্রের তারিখ ২৪শে এপ্রিল, ১৯৪৮। ... ...
প্রাথমিকভাবে এই ঘটনা ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর বিবাদের আবর্তে ঘুরপাক খেলেও, ঘটনা পরম্পরার প্রবাহ কিন্তু ইতিমধ্যেই অন্য খাতে বইতে শুরু করেছে। বর্তমান ঘটনার পরম্পরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু, কিংবা হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দের সীমারেখাকে ছাপিয়ে রাষ্ট্রের ধার্মিক চরিত্রের মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাকে ভীষণভাবে উস্কে দিয়েছে। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বর্বরোচিত হিংস্রতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজ বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় উদ্দীপ্ত হয়ে পুনরায় ‘রাজধর্মহীন’ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। শাহবাগ স্কোয়ারের সমবেত সুধী নাগরিকেরা এমন এক রাষ্ট্রের দাবীতে সোচ্চার হয়েছেন, যে রাষ্ট্র কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় আভরণে নিজেকে মুড়ে রাখবে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র হোক সবার। রাষ্ট্রের নিজস্ব কোন ধর্ম থাকবে না। ... ...
স্বাধীনতার ৭৫ বছর মানে দেশভাগেরও সুবর্ণজয়ন্তী। তিন-চতুর্থাংশ শতাব্দী আগে যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষগুলি দেশ ছেড়েছিলেন, যাঁরা আমৃত্যু স্বাধীনতাকে 'পার্টিশান' বলে এলেন, তাঁদের বেশিরভাগই আর নেই। বেঁচে আছেন তাঁদের সন্ততিরা, তাঁরাও এখন প্রবীণ, যাঁদের স্মৃতিপটে নানা ভাবে সেই বিভাজন এখনও কাঁটাতার তুলে আছে। কেউ স্বচক্ষে দেখেছেন দেশভাগ, কেউ বাবার ড্রয়ারের দস্তাবেজে। আমাদের এই বিশেষ 'দেশভাগ' সংখ্যায়, বহুলাংশে কলম ধরেছেন সেই সন্ততিরা। এক এক করে প্রকাশিত হবে গোটা সপ্তাহ ধরে। সঙ্গে আছে, টুকরোটাকরা অন্যান্য লেখা। গল্প ও কবিতারা। পড়তে থাকুন গোটা সপ্তাহ ধরে। কারণ, এই বিভাজনের ইতিহাস মনে করা, মনে রাখা, এবং মনে করিয়ে দেওয়া ভীষণ দরকার। কারণ, ওই অযৌক্তিক কাঁটাতার এখনও আছে, আর ঘাতকেরা এখনও আছে দরজায়। ... ...
তাহলে কী নিয়ে লিখবো আমি! কেউ কি বলতে পারবেন কী নিয়ে লিখতে সরকার, রাজনৈতিক দল, মৌলবাদী, জনগণ, স্বাধীনতা পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠী শান্ত থাকবে? আছেন কি কেউ বুদ্ধি দেওয়ার মতো? হ্যালো... ... ...
সাত কি আট শতাব্দীর যে লিগ্যাসি আজ ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ-বরিশালের রাস্তায় আগুন হয়ে জ্বলছে, সেই অগ্নি নির্বাপণের সদুত্তর আমাদের কারো কাছেই নেই। বাঙালীর প্রদোষকাল আজো শেষ হয় নি। শওকত আলী আমাদের সেই মহত্তম লেখকদের একজন যিনি শ্যামাঙ্গ ও লীলাবতীর এই সংলাপের ভেতর দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্ম-পরিচয়ের সঙ্কট তুলে ধরেছেন। এই বই দুই বাংলার বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলিম উভয়ের অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ। বাঙালী মুসলিমের যে অংশ আজ এদেশকে আফগানিস্থান বানানোর স্বপ্নে দিশাহারা, তাকে পড়তে হবে আত্ম-পরিচয়ের প্রশ্নে। যে বাঙালী হিন্দু ওপারে গিয়ে সর্বভারতীয় আশ্রয়ে কোনমতে মাথা গুঁজে আত্মতৃপ্ত হয়ে ভাবছেন, ‘যাক, ওপারের মুসলিম গুন্ডাদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছি’ তারও এই বই পাঠ জরুরি আত্ম-বিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধির জন্য। দু’জনকেই দু’জনের সঙ্কট-সমস্যা বুঝতে হবে। তবেই মিলতে পারবে শ্যামাঙ্গ আর লীলাবতীর ধর্মান্তরিত ও অ-ধর্মান্তরিত সন্তানরা। কারণ মা প্রকৃতি ত’ আমাদের চেহারায় এমন ছাপ দিয়েইছেন যা কিছুতেই মালা-দাড়ি, তিলক-টুপিতে ঢাকার যো নেই। ... ...
মূল শিল্পীর অনুষ্ঠানে জাঁকজমক এবং শব্দের মাত্রা আরো কয়েককাঠি ওপরে। কেউ যে নিজের গাওয়া অত্যন্ত বিখ্যাত কিছু গানের পিণ্ডি এইভাবে চটকাতে পারেন—তা না শুনলে বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়। শিল্পীর যত না গানে মনোযোগ, তার কয়েকগুণ বেশি মনোযোগ কেশসজ্জায় কিংবা লাফালাফিতে। তবে যে পুজোর যা মন্ত্র—যেরকম মাল দু-তিন কোটি টাকায় বিক্রি হবে, গায়ক তো তেমন জিনিসই উপহার দেবেন। সুরমণ্ডল সহযোগে সঠিক সুরে গাওয়া গানের দাম যদি দু্-তিন কোটির সামান্য ভগ্নাংশ মাত্র হয় (এবং তাও যদি সঠিক সময়ে না পাওয়া যায়), তবে কর্কশ চেঁচামেচির রাস্তা বেছে নেওয়াই ভালো। ... ...
আমার জন্ম অবিভক্ত ভারতে। বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়। গ্রামের নামটি নাগর পাড়া। বাবা শিক্ষকতা করতেন প্রথমে নাগর পাড়া, তারপর টাঙ্গাইলে। নাগর পাড়ায় ছিল পূর্বপুরুষদের স্থায়ী বাড়ি, তাই আয়তনেও বেশ বড়। জমি-জায়গা, গাছগাছালি প্রচুর ছিল। পাঁচটা বড় ঘর ছিল আমাদের। দক্ষিণমুখী বড় শয়ন ঘর – মেঝে ও দেওয়াল ইটের তৈরি, উপরে ত্রিভুজাকৃতি টিনের ছাদ। পূর্বদিক, পশ্চিমদিক আর দক্ষিণদিকে আরো তিনটি ঘর আর মাঝখানে বড় উঠান। পুবদিকের ঘরের পাশে বড় রান্নাঘর ছিল। আর ছিল কুয়ো পায়খানা। ... ...
এই মঞ্জু ভাইয়ের কাজ ছাড়া পূজা মণ্ডপ যেন তৈরিই হয় না। সবাই চায় মঞ্জু ভাই ওদের মণ্ডপে কাজ করুক। আর মঞ্জু ভাইয়ও হয়েছে একটা মানুষ, আটটা দশটা মণ্ডপের কাজ নিয়ে পূজার কয়টা দিন পাগলের মত ঘুরে। আমি একবার জিজ্ঞাস করেছিলাম, খুব কামাচ্ছেন? উনি হাসি দিয়ে বললেন, আরে নাহ, টাকার জন্য না, ধর্মীয় কাজে টাকার হিসাব করলে চলে!! পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আসলেই তাই। যে মঞ্জু ভাই কে বিয়ের প্রোগ্রামের জন্য দেন দরবার করে পেতে হয় আমাদের সবার, সেই মঞ্জু ভাই অনায়াসে সকলের সাথেই আছে, টাকা পয়সাও যে যত যখন পারছে দিচ্ছে। মঞ্জু ভাইদের জন্যই এখনো দেশ নিয়ে আশা করতে পারি। খাদ থেকে হয়ত বেঁচেও যেতে পারি আমরা। ... ...
স্বপ্ন দেখি, একদিন সত্যি ভেঙে যাবে বার্লিন দেওয়ালের মতোই আমাদের পদ্মার বুক ভেদ করে চলে যাওয়া ব্যবধান। দুই বাংলা এক হয়ে যাবে আবার। কোনও উগ্রপন্থার হাত ধরে না। স্বাভাবিক ভাবেই। বরিশালের মাটিতে দাদুর সুরে আমার গলা দিয়ে বেরবে আবার মুকুন্দ দাসের গান..সেদিন...আমার অজানা পূর্বপুরুষের বহু কিছু জানিয়ে দেবে বরিশালের আকাশ-বাতাস আমায়....আমি মানুষ হিসেবে পূর্ণ হয়ে উঠব.. প্রণত হব আরেকবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে.. ... ...
বরাক উপত্যকা ছেড়ে যাওয়া দুই কবি-প্রতিভা স্বর্ণালী বিশ্বাস ভট্টাচার্য ও সপ্তর্ষি বিশ্বাস যেমন অবচেতনেই তাঁদের ভূগোলকে মনের ভেতর গেঁথে নিয়ে চলে যান, তেমনই এই আসাম-দেশেই তো উত্তরবঙ্গের মানচিত্র-প্রান্তর-তিস্তাতোর্ষা মাথায় করে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসতি গাড়েন দুই কবি- বিকাশ সরকার আর অভিজিৎ চক্রবর্তী। তারপর কি হয় দেখুন। বিকাশ এই ভূগোলে বসেই তাঁর শৈশবের গ্রাম গয়েরকাটার দিকে এক অনন্ত মানসভ্রমণে মেতে ওঠেন। মানচিত্রের অবরোধ ভেঙে পড়ে। এক প্রান্তিকতা আরেক প্রান্তিকতাকে কাছে টেনে নেয়। কারণ কে না জানে, আজকের এই রাজনৈতিক মানচিত্রে কলকাতার কাছে উত্তরবঙ্গ এখনও এক প্রান্তই। ... ...
পঞ্চক্রোশী। নদী নয়, গ্রামের নাম। আমার নিজের গ্রাম। নামের হয়ত ইতিহাস আছে। সবটা আজ মনেও নেই, থাকবার কথাও নয়। তবু পাবনা জেলার উপান্তে সিরাজগঞ্জ থেকে পাঁচ ক্রোশ দূরের এই গ্রামে আমার জন্ম। নামের ইতিহাস যাই হোক, গ্রামটি যে এককালে নেহাত ছোট ছিল না তার প্রমাণের অভাব নেই। তার পুরনো আভিজাত্যের পরিচয় পাওয়া যায় নানা কাহিনী বিজড়িত কতকগুলো পরিত্যক্ত ভিটে থেকে, আর পাওয়া যায় হৃত-গৌরব জমিদারবাড়ির চুনকাম খসা, নোনাধরা ইঁটের তিন তলা দালানের চোরা কুঠরির গহবর থেকে -- যেখানে এখন চামচিকে আর লক্ষ্মীপেঁচার তত্ত্বাবধানে পড়ে রয়েছে রৌপ্য-নির্মিত আসা-সোঁটা, বল্লম, বিরাট আকারের ছাতি, চিত্র-বিচিত্র করা ভাঙা একটি রাজকীয় পালকি আর বস্তাপচা অজস্র শামিয়ানা, তাঁবু আর শতরঞ্চি। জীবনের যে সময়টা রূপকথা শোনবার বয়স সে সময়ে এমন কোন সন্ধ্যা বাদ যায় নি যেদিন ঠাকুমার মুখ থেকে শুনতে পেতাম না আমাদের গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির নানা অপরূপ কাহিনী। ... ...
শাহবাগের মোড়– প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনটি একটি বারুদের স্তুপে স্ফুলিংগ সংযোগ সূচনায় গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন । সেখান থেকে গণজাগরণ, গণ বিস্ফোরণটি ঘটে। প্রথমদিকে আন্দোলনটি শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তরুণদের আহ্বানে খুব শিগগিরই এতে ব্যপক সাড়া মেলে; কারণ সচেতন নাগরিকরা কাদের মোল্লার মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, শীর্ষ জামাত নেতার শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মেনে নিতে পারেননি। তরুণরা এই আন্দোলনটিতে পথ দেখালেও শিগগিরই ছাত্র-জনতা সকলেই এতে যোগ দেন; দেশের জেলা শহরগুলোতে তো বটেই, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গণদাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। জনমত তৈরি হয়, শুধু কাদের মোল্লা নয়, সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি –ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনটি দানা বাঁধে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী, বাঙালি ও সমমনারাও খুব শিগগিরই ১৯৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধ বিরোধী আন্দোলনটির সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করতে থাকেন। এই নয়া বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ হয়ে শাহবাগের চেতনা ছড়াতে থাকে দেশে দেশে। ... ...
১৯৪৮ সালে বার্মা আবার বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রোহিঙ্গারাও এই স্বাধীনতা আন্দোলনে জেনারেল অং সানকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু বর্মীবাহিনীর মধ্যে থেকে যায় সেই পুরনো ক্ষোভ―রোহিঙ্গারা একদা বৃটিশদের সর্বাত্মকভাবে সমর্থন দিয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সাময়িকভাবে মগ-রোহিঙ্গা দূরত্ব কমে এলেও স্বাধীনতার পর উভয়পক্ষের মধ্যে আবার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দূরত্বের কারণ সেই পুরনো ক্ষোভ। ১৯৪৭ সালে নতুন শাসনতন্ত্রিক পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রণীত ভোটার তালিকায় আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদগুলোকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আবারও শুরু হয় সংঘাত। ১৯৪৮ সালে আবারও রোহিঙ্গারা হত্যাকা-ের শিকার হয়। ... ...